সনাতন ধর্মে বহুবিবাহ কি সত্যিই অনুমোদিত

Vedayaan Desk

সনাতন ধর্মে বহুবিবাহ কি অনুমোদিত? বেদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিস্তারিত বিশ্লেষণ

সনাতন ধর্মে বিবাহ
ছবি: সংগৃহীত (Bangladesh Agniveer)

সনাতন ধর্ম বা হিন্দু ধর্মে বিবাহ একটি পবিত্র সংস্কার, যা গার্হস্থ্য জীবনের ভিত্তি। কিন্তু প্রশ্ন উঠে: সনাতন ধর্মে বহুবিবাহ কি অনুমোদিত? বহু লোকের মনে এই ধারণা আছে যে প্রাচীন কালে রাজা-মহারাজা বা ঋষি-মুনিরা একাধিক স্ত্রী রাখতেন, তাই এটি ধর্মীয়ভাবে অনুমোদিত। কিন্তু বেদ, যা সনাতন ধর্মের মূল শাস্ত্র, কী বলে? এই নিবন্ধে আমরা বেদের মন্ত্রসমূহের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করব যে সনাতন ধর্মে একবিবাহই আদর্শ, এবং বহুবিবাহ শুধুমাত্র আপদকালীন পরিস্থিতিতে (যেমন নিয়োগ) সীমিতভাবে গ্রহণযোগ্য, কিন্তু সাধারণভাবে নিন্দিত।

এই নিবন্ধটি হিন্দু ধর্মে বহুবিবাহ, বেদে বিবাহের নিয়ম, এবং সনাতন ধর্মে পলিগ্যামি সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দেবে। চলুন বিস্তারিত আলোচনা শুরু করি।


বেদে একবিবাহের স্পষ্ট প্রমাণ

বেদ সনাতন ধর্মের সর্বোচ্চ প্রমাণস্বরূপ। এতে বহুবিবাহের প্রশংসা বা বিধি কোথাও নেই, বরং এক পতি-এক পত্নীর বিধানই প্রধান। উদাহরণস্বরূপ:

মমেদসস্ত্বং কেবলো নান্যাসাং কীর্তয়াশ্চন ॥
— অথর্ববেদ ৭.৩৮.৪

মৃদুর্নিমন্যুঃ কেবলী প্রিয়বাদিন্যনুব্রতা ॥
— অথর্ববেদ ৩.২৫.৪

এসব মন্ত্রে ‘কেবলো’ এবং ‘কেবলী’ শব্দগুলো দম্পতির একত্বকে জোর দেয়, যা হিন্দু ধর্মে একবিবাহ এর আদর্শ প্রমাণ করে।

ঋগ্বেদে একবিবাহের উদাহরণ

  • 🔹 জায়েব পত্য উশতী সুবাসা উষা হস্রেব নি রিণীতে অপ্সঃ ॥
    — ঋগ্বেদ ১.১২৪.৭
  • 🔹 অয়ং যোনিশ্চকৃমা যং বয়ং তে জায়েব পত্য উশতী সুবাসাঃ।
    — ঋগ্বেদ ৪.৩.২
  • 🔹 উতো ত্বস্মৈ তন্বং বি সস্রে জায়েব পত্য উশতী সুবাসাঃ ॥
    — ঋগ্বেদ ১০.৭১.৪

এখানে ‘জায়া’ (স্ত্রী) এবং ‘পত্যে’ (স্বামী) একবচনে ব্যবহৃত, যা একক বিবাহের প্রতিপাদন করে।

বিবাহসূক্তে একবিবাহের আদর্শ

ইহৈব স্তং মা বি যৌষ্টং বিশ্বমায়ুর্ব্যশ্নুতম্ । ক্রীডন্তৌ পুত্রৈর্নপ্তৃভির্মোদমানৌ স্বে গৃহে ॥
— ঋগ্বেদ ১০.৮৫.৪২

অর্থাৎ, হে স্বামী ও পত্নী! তোমরা গৃহে একত্র মিলিত হয়ে এখানেই বসবাস করো। কখনও বিচ্ছিন্ন হয়ো না। সন্তান ও পৌত্রাদি সহ আনন্দে, ক্রীড়ায় ও উৎসবে জীবন কাটাও। মন্ত্রে স্তং, যৌষ্টং, ক্রীডন্তৌ, মোদমানৌ — সকল পদ দ্বিবচনে অর্থাৎ এক পতি ও এক পত্নীই মূল সংস্কার।


বেদে বহুবিবাহের নিন্দা

  • সং মা তপন্ত্যভিতঃ সপত্নীরিব পর্শবঃ ।
    — ঋগ্বেদ ১০.১০৫.৮
    সপত্নীরা যেমন যন্ত্রণা দেয়, তেমনি কষ্টের উপমা।
  • উভে ধুরৌ বহ্নিরাপিব্দমানোঽন্তর্যোনেব চরতি দ্বিজানিঃ ।
    — ঋগ্বেদ ১০.১০১.১১
    দুই স্ত্রীর স্বামীকে বন্দী ঘোড়ার মতো বলা হয়েছে।
বহুবিবাহ = দুঃখ + দাসত্ব

আপদকালীন ব্যতিক্রম: বেদে শুধুমাত্র আপদধর্মে (জরুরি অবস্থায়) বিধবাবিবাহ বা নিয়োগের বিধান আছে, যা সরাসরি বিবাহ নয়। এটি সন্তানোত্পাদনের জন্য সীমিত, কিন্তু সাধারণভাবে বহুবিবাহ অনুমোদিত নয়।


সনাতন ধর্মের ইতিহাসে বহুবিবাহের উদাহরণ: সত্য কী?

প্রশ্ন:

রাজা দশরথের ৩ পত্নী, দ্রৌপদীর ৫ পতি – এসব কি ধর্মীয় অনুমোদন?

উত্তর:

সনাতন ধর্ম ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভর করে না। এসব ঘটনা রাজনৈতিক, সামাজিক বা কালীন পরিস্থিতির ফল। উদাহরণস্বরূপ:

  • দশরথের ৩ পত্নী দেখলেও, শ্রীরামের ১৪ বছর বনবাস ভুলে যাই না।
  • দ্রৌপদীর ৫ পতি মহাভারত যুদ্ধের কারণ হয়েছে।

গৌতম ধর্মসূত্র (১.১.৩-৪): মহাপুরুষদের ব্যতিক্রম সাধারণের অনুসরণীয় নয়।

প্রশ্ন:

মহাপুরুষদের ভুলকে কি ছাড় দেওয়া হয়?

উত্তর:

তৈত্তিরীয়োপনিষদ (১.১১): “যান্যস্মাকং সুচরিতানি তানি ত্বয়োপাস্যানি নো ইতরাণি।” — সৎকর্ম গ্রহণ করো, দুষ্কর্ম পরিত্যাগ করো।


উপসংহার: সনাতন ধর্মে একবিবাহই আদর্শ

বেদের মন্ত্রসমূহ থেকে স্পষ্ট যে হিন্দু ধর্মে বহুবিবাহ অনুমোদিত নয়, এটি নিন্দিত এবং দুঃখের কারণ। একবিবাহ গার্হস্থ্য জীবনের সুখ, শান্তি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির ভিত্তি।

আধুনিক সমাজেও এটি প্রাসঙ্গিক। যদি আপনার আরও প্রশ্ন থাকে, কমেন্ট করুন।

© বেদায়ন | এই নিবন্ধটি সনাতন ধর্মের শাস্ত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা। আরও তথ্যের জন্য বেদ অধ্যয়ন করুন।

সনাতন ধর্মে বহুবিবাহ, হিন্দু ধর্মে পলিগ্যামি, বেদে বিবাহের নিয়ম, একবিবাহ, ঋগ্বেদ, অথর্ববেদ, রাজা দশরথ, দ্রৌপদী, বৈদিক বিবাহ

শ্রদ্ধা জানাই জ্ঞানকে, সম্মান রাখি সৃষ্টিতে। Vedayaan (বেদায়ান)-এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা, ছবি ও উপস্থাপন অনন্য এবং সযত্নে প্রস্তুত। এই পোস্ট বা এর যেকোনো অংশ অনুমতি ছাড়া কপি, পুনঃপ্রকাশ বা সম্পাদনা করা আইনত নিষিদ্ধ। কোনো ধরনের অননুমোদিত ব্যবহার করলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের প্রয়াসের মর্যাদা রাখতে অনুগ্রহ করে কোডে মূল ক্রেডিট বজায় রাখুন।

Copyright

Vedayaan (বেদায়ান)

Join the conversation