শ্রীকৃষ্ণ ও সুদামা: বন্ধুত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্তমূলক গল্প:–
ছোটবেলায় সুদামা নামে শ্রীকৃষ্ণের এক বন্ধু ছিলেন! সুদামা অতিশয় সৎ নির্লোভ
সচ্চরিত্র নিষ্ঠাবান ভক্ত ব্রাহ্মণ, কৃষ্ণকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন! একই গুরুর
নিকট তাঁরা পড়াশোনা করেছেন! বড় হয়ে শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকার রাজা হলেন; তাঁর খ্যাতি
সর্বত্র! এদিকে সুদামার অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে লাগল, এমন অবস্থা যে দু'বেলা
ঠিকমত খাবারও জোটেনা! একদিন সুদামার স্ত্রী তাঁকে বললেন, "ওগো, তোমার বন্ধু
কৃষ্ণ তো দ্বারকার রাজা, তাঁর কাছে গেলে হয়তো কিছু সাহায্য পাওয়া যেত, তাতে
আমাদের অভাব অনেকটা ঘুচত!" কিন্তু নির্লোভ সুদামা স্বভাবসুলভ লজ্জায় তাতে রাজী
হলেন না!
পরম পুরুষোত্তম ভগবান কৃষ্ণ
কৃষ্ণ (সংস্কৃত: कृष्ण) বা শ্রীকৃষ্ণ (সংস্কৃত: श्रीकृष्ण) হলেন সনাতন
হিন্দুধর্মে পরম পুরুষোত্তম ভগবান। পুরাণ অনুযায়ী তিনি বিষ্ণুর অষ্টম
অবতার। তাঁকে সর্বোচ্চ ঈশ্বর (পরম সত্ত্বা) উপাধিতে ভূষিত করা হয় এবং
তিনি ভগবদ্গীতা-এর প্রবর্তক। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে
তাঁর জন্মোৎসব পালন করা হয়।
সুদামা কে?
সুদামা হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শৈশব বন্ধু, শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে
সাক্ষাতের জন্য যার দ্বারকায় যাওয়ার গল্পটি ভাগবত পুরাণে উল্লেখ আছে।
সুদামা দক্ষিণ ভারতে কুচেলা নামেও পরিচিত। তাঁর মাতাপিতা হলেন মাতুক ও
রচনা দেবী। তাঁর দম্পত্য সঙ্গী হলেন সুশীলা।
বললেন, "আরে এই অবস্থায় কী করে ওর কাছে যাই?" কিন্তু স্ত্রীর পীড়াপীড়িতে ও অনেক
দিন পর বন্ধুর সঙ্গেও দেখা হবে এই ভেবে যেতে রাজি হলেন! যাওয়ার সময় তাঁর
স্ত্রী কৃষ্ণকে উপহার দেওয়ার জন্য কিছু চিড়ার খুদ সুদামার চাদরে বেঁধে দিলেন!
যদিও কৃষ্ণকে এই অতি সামান্য উপহার দেবার কথায় সুদামা অত্যন্ত কুণ্ঠিত হলেন,
কিন্তু এছাড়া কীই বা ঘরে আছে? সুদামা দ্বারকায় রওনা হলেন! সুদামা দ্বারকায়
পৌঁছে শ্রীকৃষ্ণের বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ালেন! তাঁকে দেখামাত্র কৃষ্ণ "আরে
সুদামা!" বলে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন!
সুদামা অঝোরধারে কেঁদে ফেললেন! কৃষ্ণ তাঁকে ঘরে নিয়ে গিয়ে স্বহস্তে তাঁর পা
ধুইয়ে দিলেন! তারপর শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর তিন স্ত্রী তাঁকে অত্যন্ত আদর-আপ্যায়ন
করলেন ও চারজনেই তাঁর পরিচর্যায় নিযুক্ত হলেন! খাওয়ার সময়ে সুদামা মাঝে মাঝে
কাঁদছিলেন এই ভেবে যে, 'আমি এখানে এত উপাদেয় খাবার খাচ্চি, ওদিকে আমার বৌটা আজ
সামান্য খুদকুঁড়ো চিবিয়েই দিনটা কাটাচ্চে!' শ্রীকৃষ্ণ সব লক্ষ্য করলেন কিন্তু
মুখে কিছু বললেন না! খাওয়া-দাওয়ার পর কৃষ্ণ জিজ্ঞাসা করলেন, "কিরে? আমার জন্যে
কি এনেছিস, দে?" সুদামা আমতা আমতা করে বললেন, "এনেচি... মানে... ...ইয়ে
মানে..."
কৃষ্ণ: "কি মানে মানে করছিস!! দেখি তোর পুঁটলিতে কি আছে?"
কৃষ্ণ পুঁটলি খুলে দেখে বললেন, "বাঃ! বাঃ!! আমার জন্যে চিঁড়ে এনেছিস? আসলে
লোকে আমাকে একনাগাড়ে মিষ্টি খাইয়ে অরুচি ধরিয়ে দিয়েছে! তাই ক'দিন ধরে
স্বাদবদলের কথা ভাবছিলুম! তা তুই আমার মনের কথাটা ঠিক বুঝতে পেরেছিস! আবার
শুকনো চিঁড়ে খেতে অসুবিধা হবে বলে জলে ভিজিয়ে এনেছিস! তোর জবাব নেই!" সুদামা
কাঁদতে লাগলেন!
কৃষ্ণ: "কিরে, তখন থেকে খালি কাঁদছিস কেন? বৌ এর কথা ভাবছিস?"
সুদামা: "না রে ভাই! আসলে আসবার সময়ে আমাদের ফেলে আসা ছোটোবেলার কথা
ভাবছিলুম, তাই কাঁদছিলুম আর চোখের জল পড়ে পড়ে চিঁড়ে ভিজে গেচে!"
কৃষ্ণ: "বাহ্ চমৎকার! দেখ্, কত লোক আমায় কত কী খাওয়ায়, কিন্তু জানিস,
আজ পর্যন্ত কেউ আমায় চোখের জলে ভেজানো চিঁড়ে খেতে দেয়নি!" এই বলে শ্রীকৃষ্ণ সেই
সামান্য চিঁড়ের খুদ পরম তৃপ্তিভরে খেলেন; বললেন, "সত্যিই তোর জবাব নেই রে
সুদামা! এইজন্যেই তো তোকে এত ভালোবাসি!" তারপর তাঁরা অনেকক্ষণ গল্প করলেন!
অনেকদিন পরে বন্ধুর সাক্ষাত পেয়ে এতই আনন্দ হচ্ছিল যে সুদামা তাঁর দারিদ্রের
কথা কৃষ্ণকে বলতে ভুলে গেলেন! কৃষ্ণের থেকে সাহায্য চাওয়ার কথাও মনে এল না!
তারপর এল বিদায় নেবার পালা! কৃষ্ণ বললেন, "আবার আসবি তো?" সুদামা বললেন, "আসব!"
তারপর সুদামা বাড়ীর পথে রওনা দিলেন! বাড়ীর কাছে পৌঁছে দেখলেন, একি!! কোথায় গেলো
সেই কুটির?? তাঁর কুঁড়েঘরের জায়গায় বিশাল এক অট্টালিকা! ঘরে ধনসম্পদের অভাব
নেই! কী তাজ্জব ব্যাপার!! এ কী করে সম্ভব হলো?? তিনি বাইরে দাঁড়িয়ে অবাক্ হয়ে
এইসব ভাবছেন, এমন সময়ে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বারান্দা থেকে দেখতে পেয়ে নীচে নেমে
বাইরে এসে সুদামাকে বললেন, "ওগো, তুমি বাড়ী থেকে বেরুলে আর আমি সবে পুজোয়
বসেচি, হঠাৎ দেখি সব কিরকম পাল্টে গেলো! দেখচ? শ্রীকৃষ্ণ আমাদের অভাব দূর করে
দিয়েচেন!" সুদামা আরো অবাক হয়ে বললেন, "আরে! তা কি করে হয়? আমি তো ওকে আমার
দূরবস্থা সম্বন্ধে কিছুই বলিনি!" তাঁর স্ত্রী বললেন, "ওগো, তাঁকে কি কিছু বলতে
হয়? তাঁর কাছে গেলে তিনিই সব ঠিক করে দেন! তোমার বন্ধু হলেও তুমি তাকে চিনতে
পারোনি, কিন্তু আমি চিনতে পেরেচি! তাঁর শরণাপন্ন হলেই নিশ্চিন্ত! তিনি যে আর
কেউ নন গো, তিনি
'ভক্তের ভগবান' শ্রীকৃষ্ণ !' হরেকৃষ্ণ
গল্পটি সম্পর্কে সবাই দুটি কথা লিখবেন কেমন ছিলো তাদের বন্ধুত্বের
সম্পর্কটা......
এই ব্লগপোস্টে আমি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর বাল্যবন্ধু সুদামার বন্ধুত্বের এক
বিশেষ কাহিনী তুলে ধরেছি। ভুল ও ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 🙏 এবং এ
সম্পর্কে নিচের কমেন্টের মাধ্যমে আপনার মতামত জানাতে পারবেন। ধন্যবাদ 💟,
এতক্ষণ সময় দিয়ে পড়ার জন্য। আমাদের ফেসবুক ফেইজ ও গ্রুপে যুক্ত হওয়ার অনুরোধ
রইল।
সম্পাদনায়: ধ্রুব দাশ (সিইও)
প্রযোজনা: VedicVoyage
অন্যান্য সহযোগিতায়: Google, Dhrubo Creations